প্রিন্ট এর তারিখঃ Sep 12, 2025 ইং || প্রকাশের তারিখঃ Jul 29, 2025 ইং
টাঙ্গাইলে দলবদ্ধ ধর্ষণকারী ওরা ৩জন পেশাদার অপরাধী

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:
ভুলক্রমে উত্তরবঙ্গগামী ট্রেনে চড়ে টাঙ্গাইল স্টেশনে এসে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ব্রাহ্মনবাড়ীয়ার নাসিরনগর উপজেলার এক তরুণী (২৩)। ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩জনই আদালতে তরুণীকে ধর্ষণ করার কথা স্বীকার করেছেন। ওই তিন ধর্ষক প্রকৃতপক্ষে পেশাদার অপরাধী। তাদের বিরুদ্ধে চুরি, ছিনতাই, অপহরণ ও ট্রেনে আগুন দেওয়ার মতো অভিযোগও রয়েছে।
টাঙ্গাইল রেল স্টেশনের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ, টাঙ্গাইল মডেল থানার তদন্ত কর্মকর্তা ও স্থানীয় বাসিন্দারা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পেশাদার ওই অপরাধীরা হলেন টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ব্রাহ্মণকুশিয়া গ্রামের সেন্টু রবিদাসের ছেলে দুলাল চন্দ্র দাস (২৮), হালিম খানের ছেলে সজিব খান (১৯) এবং মৃত কিসমত মিয়ার ছেলে রুপু মিয়া (২৭)।
জানা যায়, টাঙ্গাইল রেল স্টেশনটি ঘারিন্দা ও ব্রাহ্মণকুশিয়া গ্রাম জুড়ে বিস্তৃত। ১৯৯৯ সালে চালু হওয়া এই স্টেশন থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার লোক বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করেন। ১৭টি ট্রেন এই স্টেশন হয়ে আসা-যাওয়া করে। এর মধ্যে ভারতে চলাচলকারী মৈত্রী ও মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন বন্ধ রয়েছে। এই স্টেশনে চলাচলকারী যাত্রীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই নাজুক। এই রেল স্টেশনে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী নেই। অস্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ি থাকলেও জনবল কম। তারা জিআরপি সীমানার বাইরে দায়িত্ব পালন করতে পারেননা। ফলে এই স্টেশন ঘিরে গড়ে উঠেছে একটি অপরাধী চক্র। ব্রাহ্মণকুশিয়া গ্রামেই এই চক্রের সদস্য বেশি। চক্রটি টাঙ্গাইল স্টেশনের বাইরে অবস্থিত দোকানের অস্থায়ি কর্মচারি, প্লাট ফর্মে যাত্রি, হকার, সিএনজি ও অটোরিক্সা চালক হিসেবে অবস্থান করে থাকে। এই এলাকায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা না থাকায় ওই চক্রটির বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন সময় অঘটন ঘটছে।
রিক্সা চালক রজব আলী জানান, আমি সন্ধ্যার পর রেল স্টেশনে যাত্রি আনা নেওয়া করিনা। এই এলাকার অপরাধিরা যাত্রি বেশে উইঠা সব নিয়া নেয়। অটোরিক্সায় যাত্রি অইয়া ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে উইঠা ডাইনে ফাঁকা জায়গায় নিয়াই সব কাইরা নেয়। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রহমান জানান, স্টেশনের মেলা বড় প্লাট ফর্ম। এমাথা ও মাথায় কি অয় হেই খবর কেউ রাহেনা। ব্রাহ্মনকুশিয়ার কিছু পোলাপান গ্রামের ইজ্জতটাই নষ্ট কইরা হালাইছে। তাগর নগে অন্য জাগারও লোক মিলা আকাম কুকাম করে। শুক্রবার রাইতে নারী নির্যাতন করছে।
শুক্রবার (২৫ জুলাই ) দিবাগত রাতে রেল স্টেশনের পাশের গ্রামে নিয়ে তরুণীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগি তরুণী চট্টগ্রাম যাওয়ার জন্য রাজধানীর বিমানবন্দর স্টেশন থেকে চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠেছিলেন। তিনি ট্রেনে উঠেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। যখন ঘুম ভেঙ্গেছে তখন পাশের যাত্রির নিকট থেকে জানতে পারেন তিনি ভুলক্রমে দিনাজপুরগামী ট্রেনে চড়েছেন। এটি চট্টগ্রামগামী ট্রেন নয়। বিভ্রান্ত এই নারী পরবর্তী স্টেশন টাঙ্গাইলে নামেন রাত সাড়ে ১০টার দিকে। তিনি ট্রেন থেকে নামার পর জিআরপি পুলিশের স্মরণাপন্ন হন। জিআরপি পুলিশের কনস্টেবল মেহেদী হাসান তাকে পরবর্তী ট্রেন পদ্মায় চড়ে যমুনাসেতু পূর্বে ইব্রাহীমাবাদ স্টেশনে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে ওই তরুণী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন।
টাঙ্গাইল রেল স্টেশন পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ হারুন উর রশীদ জানান, এই ফাঁড়িতে একজন উপপরিদর্শক, একজন সহকারি উপপরিদর্শকসহ মোট সাত জন কর্মরত। ঘটনার দিন দুইজন ছিলেন ছুটিতে। রাতে ভুক্তভোগি তরুণী আমাদের কনস্টেবল মেহেদীর স্মরণাপন্ন হলে তিনি তরুণীকে পদ্মা ট্রেনে ইব্রাহীমাবাদ যাওয়ার পরামর্শ দেন। শুক্রবার রাতে রেল স্টেশনে পদ্মা ট্রেনের মাত্র দুই জান যাত্রি অপেক্ষারত ছিল। ওই তরুণী একা থাকায় মেহেদি তাকে উঠিয়ে দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল। কিন্তু রাত সাড়ে এগারটার দিকে খবর আসে সল্লায় ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছেন। ওই খবর পাওয়ার পর আমরা ট্রেন লাইন ক্লিয়ার করা এবং মরদেহ উদ্ধারে ব্যস্ত হই। তখন মেহেদি হাসান স্টেশনে অবস্থানরত ব্যক্তিকে পদ্মা ট্রেনে উঠিয়ে দেওয়ার জন্য বলে সল্লায় যান। সকালে আমাদের ফাঁড়িতে ওই তরুণী এসে অভিযোগ করেন রাতে তাকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। ওই সীমানা রেলওয়ে পুলিশের না হলেও ভুক্তভোগি তরুণীর দেখিয়ে দেওয়া স্থানগুলোতে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে টাঙ্গাইল মডেল থানা পুলিশকে অবহিত করি। পরবর্তীতে থানা পুলিশ এসে পরবর্তী সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করে গ্রেপ্তারকৃতদের নিয়ে যান।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) ভিক্টর ব্যানার্জী জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের সময় গ্রেপ্তার তিনজনেই শনিবার রাতে ধর্ষণের কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালতের বিচারক তাদেরকে কারাগারে পাঠিয়েছেন।
টাঙ্গাইল রেল স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. কামরুল ইসলাম জানান, টাঙ্গাইল স্টেশনটি শহরের একেবারেই বাইরে। রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী না দেওয়ায় অনেকটা নিরাপত্তাহীনতায় ভূগি আমরা। অস্থায়ী ফাঁড়ি থাকলেও জনবল একেবারেই কম। স্টেশনে যাতায়াতের অ্যাপ্রোস সড়ক ভাঙ্গাচুরা। এই এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা একেবারেই কম। রাত বাড়ার সাথে সাথে নির্জনতার সাথে সাথে আতঙ্ক নেমে আসে। আমরাও অসহায়ত্ব বোধ করি। এই স্টেশনে দুইটি প্লাটফর্ম থাকলেও ফুট ওভারব্রীজ না থাকায় দুইটি ট্রেন পাশাপাশি হলে যাত্রিদের ভোগান্তি বেড়ে যায়। একট্রেন অতিক্রম করে অন্য ট্রেনে উঠতে হয়। আবার এক ট্রেনের অপরপ্রান্তের যাত্রিরা নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েন। তাই জরুরী ভিত্তিতে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহবান জানান তিনি।
© সকল কিছুর স্বত্বাধিকারঃdailyprogotiralo.com