টাঙ্গাইলের ঘাটাইল বনবিভাগের ধলাপাড়া রেঞ্জের ঝড়কা বিটের আওতাধীন সরকারের সংরক্ষিত বনের জায়গায় বিভিন্ন স্থাপনা নির্মানের হিড়িক পড়ে গেছে। বনের মুল্যবান জায়গায় প্রকাশ্যে ঘর-বাড়ি উঠালেও অজ্ঞাত কারণে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। ফলে সংরক্ষিত বনভূমিতে প্রতিনিয়ত উঠছে ঘর-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা। সংকোচিত হয়ে আসছে বনভূমির পরিমান। বন আইনে বনভূমিতে স্থাপনা নির্মানতো দুরের কথা একটা ছাপড়া ঘর উঠালেও দন্ডনিয় অপরাধ। কিন্তু বনভূমি দখল করে বন কর্মকর্তার নাকের ডগায় দালান কোঠা উঠলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা। অথচ ঘাটাইলে বনের জমির খাজনা বাবদ ভূমি অফিসকে বছরে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা প্রদান করছে বন বিভাগ।
সরেজমিনে ঝড়কা বিটের অনতিদূরে নয়নচালা নামক স্থানে গিয়ে দেখা গেছে, সরকারি সংরক্ষিত বনের মূল্যবান জায়গা দখল করে নির্মান করা হচ্ছে স্থায়ী বিল্ডিং। এগুলো বনবিভাগের জায়গা কিনা জানতে চাইলে একই এলাকার জনৈক ব্যক্তি (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, ওগুলো সব ফরেষ্টের জায়গা। কিছুদিন আগে ধলাপাড়া রেঞ্জার এসে ওই বিল্ডিং এর নির্মান কাজ বন্ধ করে দিয়ে যায়। কিছুদিন কাজ বন্ধ ছিল। আবার কাজ করছে। ফরেষ্টার কাজ বন্ধ করে দেয়ার পর আবার কাজ করে কিভাবে এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, তাদের(ফরেষ্টের) সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়া কি কেউ একটা ঘরও উঠাতে পারবে।
জানা গেল ওই স্থাপনার মালিক মোহাম্মদ আলী নামে এক ব্যক্তি। তার একশ’ গজের মধ্যেই আরো একটি বিল্ডিং তৈরি করছেন তার চাচাতো ভাই হোসেন আলী। ঘটনাস্থলে তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি।
জানা যায়, বনের ভেতর ঘরবাড়ি তোলা কিংবা জবর দখলের বিষয়ে বন কর্মকর্তাদের কাছে জানালে উল্টা হয়রানির শিকার হতে হয়। সাজানো বন মামলায় ফেঁসে যাওয়ার ভয়ে কেউ কথা বলতে চান না। প্রতিবাদ করতে গিয়ে অনেক নীরিহ মানুষকে বনের মিথ্যা মামলার খড়গ টানতে হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে।
ফলে বন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে চান না।
অভিযোগ উঠেছে বনের জায়গা জবর দখলের মদদ রয়েছে স্থানিয় ঝড়কা বিট কর্মকর্তা আয়ুব আলী শেখের।
ফরেষ্টের জায়গায় সদ্য নির্মিত স্থাপনার মালিক নয়নচালা গ্রামের মোহাম্মদ আলীর কাছে মুঠোফোনে জানতে চাওয়া হয় ফরেষ্টের জায়গা কিভাবে পাকা ঘরবাড়ি করছেন, জবাবে তিনি প্রথমে চুপ থেকে পরে বলেন সবই তো বুজেন, ফরেস্টোরের পার্মিশন ছাড়া কিছু করা যায়? একবার কাজ বন্ধ রাখছিলাম আবার কয়দিন আগে ছাদ ঢালাই দিছি। এরপর সাক্ষাতে কথা বলবো বলে ফোন কেটে দেন । অপরদিকে পাশাপাশি আরও একটি স্থাপনা নির্মান করছেন মোহাম্মদ আলীর চাচাতো ভাই হোসেন আলী। ফরেষ্টের জায়গায় বিল্ডিং তুলছেন কিভাবে এখানে ফরেষ্টের লোকজন কিছু বলে না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবনা। এ বিষয়ে আমার ভাই মোহাম্মদ আলী সব জানে।
ঝড়কা বিট কর্মকর্তা আয়ুব আলী শেখের কাছে জানতে চাইলে বলেন, ঘর তোলার সময় আমাদের কাছে কেউ জানায় না। জানালে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেই। নয়নচালা মোহাম্মদ আলী এবং হোসেন আলীর কাজ বন্ধ ছিলো, শুনলাম আবার করছে। পাহাড়া দিয়েতো রাখা যায়না। অফিসে আইসেন,কথা হবে বলে ফোন কেটে দেন।
জানতে চাইলে ধলাপাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা সাব্বির হাসান বাংলাদেশের আলো কে বলেন, আমি যোগদানের আগে ওই বিল্ডিংটির কাজ শুরু হয়েছিল। আমার কাছে অভিযোগ আসলে আমি নির্মান কাজ বন্ধ করে দিয়ে আসি। এর পর কখন আবার কাজ করছে এটা আমি জানি না। তবে এ বিষয়ে ডিএফও স্যারের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
ফরেষ্টের জায়গায় স্থাপনা নির্মান করা যায় কিনা জানতে চাইলে টাঙ্গাইল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ড.আবু নাসের মোহসিন হোসেন বাংলাদেশের আলো কে বলেন, শুধু স্থাপনা নয়,ফরেষ্টের ভূমিতে কোন কিছুই উঠাতে পারবেনা। তাহলে কিভাবে স্থাপনা হচ্ছে জানতে চাইলে বলেন, এটা ইউএনও এবং ডিসির দায়িত্ব,ওনারা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটি ক্ষমতায় অভিযান করবেন এবং বলেন ছাদ ঢালাই হতে কমপক্ষে তিন মাস লাগছে, আপনি এখন কেন বলছেন,আগে বলতেন! সাংবাদিক তো আপনার অধিনস্ত না, এটি তো আপনাদের (বিট ও রেঞ্জ) অফিসের দায়িত্ব কিনা জানতে চাইলে উত্তরে বলেন, আচ্ছা আমি খোজঁ নিয়ে ব্যবস্থা নিবো।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.আবু সাঈদ বাংলাদেশের আলো কে বলেন,বন বিভাগ আমাদের কাছে সহায়তা চাইলে অপদখলকারি উচ্ছেদ করতে আমরা ম্যাজিস্ট্রেসি সহায়তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহযোগিতা দিব।
টাঙ্গাইল বনবিভাগের জরিপ অনুযায়ী, ঘাটাইল উপজেলায় বনভূমির পরিমাণ ২৫ হাজার ৭৮৫ একর। এর মধ্যে দখল হয়ে গেছে প্রায় দুই হাজার একর বনভূমি। যেখানে দখলদারের সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার জন।
১৯২৭ সালের সংশোধিত বন আইন এবং ২০১২ সালের বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ আইনে সংরক্ষিত বনে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করার নির্দেশ রয়েছে।