ঢাকা | 04 November 2025

ঘুষ নিলে ৬৫ হাজার।। ভাগে পাইল ৮হাজার

স্টাফ রিপোর্টার, .
নিউজ প্রকাশের তারিখ :Oct 19, 2025 ইং
ছবির ক্যাপশন: ছবির ক্যাপশন:
ad728
যুবদল নেতাকে থাপ্পড়ের ঘটনায় ক্লোজড হওয়া এসআই রাসেল মিয়া এবার ৬৫ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ায় এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। রাসেল মিয়া এক সিএনজি চালকের পরিবারকে ভয় দেখিয়ে দুই দফায় ৬৫ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন। রাসেল বর্তমানে যমুনা সেতু পূর্ব থানায় এসআই হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এর আগে ২৬ আগস্ট গোপালপুর থানায় আলমনগর ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য সচিব আমিনুল ইসলামকে থাপ্পড় দেয়ার ঘটনায় উপপরিদর্শক (এসআই) রাসেল মিয়াকে ক্লোজড করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছিলো।

স্থানীয়রা জানান, গত ৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় কালিহাতীর দেউপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামের হাফেজ জোনায়েদ আল হাবিব টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কের ৭নং সেতু থেকে তার বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় মীরহামজানি গ্রামের সিএনজি চালক সেলিমের সিএনজি থামাতে ইশারা দিলে তিনি একটু দুরে গিয়ে সিএনজিটি থামান। ততক্ষণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি ট্রাক মহাসড়কের পাশে পড়ে যায়। ট্রাক চাপায় হাফেজ জোনায়েদ গুরুত্বর আহত হলে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেলারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়৷ সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।এ বিষয়ে নিহতের পরিবার থানায় কোন অভিযোগ করেনি।

১২ সেপ্টেম্বর যমুনা সেতুর এসআই মো. রাসেল মিয়া দুইজন পুলিশ সদস্য নিয়ে সিএনজি চালক সেলিমের বাড়িতে গিয়ে বিভিন্ন ভাবে ভয় ও হুমকি দিয়ে ২৫ হাজার টাকাসহ সিএনজিটি থানায় নিয়ে যান। পরের দিন রাতে তৎকালীন ওসিকে টাকা দিতে হবে বলে জানালে সেলিমের বাবা আব্দুল হাই, আত্মীয় হাফেজ আলী থানায় গিয়ে আরও ৪৫ হাজার টাকা দিলে সিএনজি ছেড়ে দেন রাসেল।
স্থানীয়রা বলছেন, মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করা পুলিশ সদস্য কোন অভিযোগ ছাড়া কিভাবে গ্রামে প্রবেশ করে ঘুষ নিলো এটা নিয়ে সম্প্রতি সময়ে জানাজানি হলে এলাকায় তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে।
নিহত হাফেজ জোনায়েদ আল হাবিবের ভাই বলেন, ভাইয়ার জানাযায় সময় ট্রাক মালিক কর্তপক্ষ এসে ক্ষতিপূরণ দিতে চেয়েছিলো, তবে আমরা নেইনি। এছাড়াও থানায়ও কোন অভিযোগ করিনি । তবে ট্রাক মালিক কর্তপক্ষ আমাকে ফোন করে জানিয়েছে, পুলিশ তাদের কাছে মোটা অংকের টাকা চাচ্ছে।
১২তারিখে সিএনজি চালকের বাড়িতে উপস্থিত থাকা স্থানীয় তানভীর আহমেদসহ অনেকেই জানান, ৩জন পুলিশ সেলিমের বাড়িতে এসে মহিলাদের হুমকি দিয়ে ঘরে ডুকে তল্লাশি করে। তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা অভিযোগ পেয়ে এখানে এসেছে ও অনুমতিও আছে বলেই গালিগালাজ করে। ওই পুলিশ সদস্যরাতো সেতু থানার । তারা কোনভাবে বাড়িতে প্রবেশ করতে পারে না। অভ্যুত্থানের পর ভেবেছিলাম পুলিশ মানুষকে ভয় দেখিয়ে ঘুষ নেয়া বন্ধ করবে। ফ্যাসিস্ট সরকারের পুলিশের মতো কাজ করে এসআই রাসেল। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মনিরুজ্জামান ফরিদ বলেন, রাতে এসআই রাসেল সেলিমের বাড়ি গিয়ে আমাকে ফোন করে ডেকে নিয়ে যায় । সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মরছে সেই ভয় দেখিয়ে এসআই রাসেল দুই দফায় ৭০ হাজার টাকা নিয়েছে। গরীব মানুষকে এভাবে অত্যাচার করা ঠিক না।
সেলিমের বাবা আব্দুল হাই বলেন, পুলিশ বাড়িতে গিয়ে অনেক ভয় দেখিয়ে দুই লাখ টাকা দাবি করে। ভয় বা হুমকি ধামকি থেকে বাঁচতে সর্বশেষ ৭০ লাখ টাকায় দফারফা হয়। ঋণ করে প্রথম দিন ২৫ হাজার ও পরের দিন ৪৫ হাজার টাকা দিলে রাসেল পুলিশ পাঁচ হাজার টাকা ফেরত দেয়। পরে থানার ওসির রুমে নিয়ে ওসিকে দেখিয়ে তার অসুস্থতার কথা বলে দোয়া করতে বলে এসআই রাসেল মিয়া আমাদের বিদায় করে দেন। তাদের ব্যবহারে মনে হয়েছে টাকার ভাগ ওসি সাহেবও পেয়েছেন। টাকা ফেরতসহ রাসেলের বিচার চান তিনি।
সেলিমের আত্মীয় হাফেজ আলী বলেন, রাতে হটাৎ করে আমার কাছে ২০হাজার টাকা ধার চাইলে আমি জানতে চাওয়ায় আমাকে পুলিশের বিষয়টি জানান।  পরে আমি ২০হাজার টাকা ধার দেই। পরের দিন আমি সাথে গিয়ে আরো ৪৫হাজার টাকা দিয়ে থানা থেকে সিএনজি ছাড়িয়ে নিয়ে আসি। আসার সময় পুলিশ ৫হাজার টাকা ফেরত দিয়েছে। 
সিএনজি চালক মো. সেলিম মিয়া বলেন, ওইদিন আমি বাড়ির বাইরে ছিলাম। বাড়িতে পুলিশ এসে হুমকি ও ভয় দেখাচ্ছে খবর পেয়ে আমি আর বাড়িতে যাওয়ার সাহস পাইনি। আমার কোন অন্যায় না থাকা সত্যেও আমার পরিবারকে ভয়ে দেখিয়ে ২দফায় ৬৫হাজার টাকা নিয়েছে। আমরা গরীব মানুষ। ভয়ে আছি আবার কোন ভাবে ফাঁসিয়ে দেয় আমাদের। 
যমুনা সেতু পূর্ব থানার এসআই রাসেল মিয়া জানান, টাকা নেয়ার পর ভাগাভাগি করে আমি মাত্র ৮হাজার টাকা পেয়েছি। তৎকালীন ওসি স্যারও টাকা নিয়েছে। সেতো এখন চলে গেছে। সব দোষ এখন আমার ঘাড়ে এস৷ পড়তেছে।তবে যমুনা সেতু পূর্ব থানার তৎকালীন ওসি (বর্তমান শরিয়তপুর সখিপুরে বদলি) ফয়েজ আহম্মেদ জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তার রুমে কাউকে নেয়াও হয়নি । টাকার কোন ভাগও তিনি পাননি।

টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. রবিউল ইসলাম জানান, এ বিষয়টি আমার জানা নেই। কেউ অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ