বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ফলদ ও বনজ বৃক্ষের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বহুমাত্রিক। এই গাছগুলো শুধুমাত্র পরিবেশ রক্ষাই করে না, বরং মানুষের জীবিকা, পুষ্টি, অর্থনীতি এবং জলবায়ু সহনশীলতা বৃদ্ধিতেও বড় ভূমিকা রাখে।
বাংলার কৃষককুল ও গ্রামীণ জনগণ ফলদ ও বনজ গাছ বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করতে পারে। যেমন: আম, কাঁঠাল, লিচু, নারিকেল, সুপারি, কমলা, মালটা , কাঠবাদাম, জলপাই ,তেঁতুল ইত্যাদি। পাশাপাশি বনজ বৃক্ষ যেমন সেগুন, গামারি, মেহগনি ,শাল গর্জন প্রভৃতি গাছের কাঠ থেকে আসবাবপত্র, নৌকা , গৃহ ও নির্মাণসামগ্রী তৈরি হয়, যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।তাছাড়া কিছু ফল ও কাঠ আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হয়।
সামাজিক ও জীবিকাভিত্তিক উন্নয়নে বৃক্ষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নার্সারি, বৃক্ষরোপণ, ফল সংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। নারীরা ফল প্রক্রিয়াজাতকরণ বা নার্সারি ব্যবসার মাধ্যমে স্বনির্ভরতা অর্জন করছে। দারিদ্র্যতা বিমোচনে
বৃক্ষের অবদান অনস্বীকার্য। দরিদ্র পরিবারগুলো নিজ জমিতে ফলদ ও বনজ বৃক্ষ রোপণ করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়। নানাভাবে দারিদ্র্য বিমোচনের পথ সুগম করে নানা ধরনের বৃক্ষরাজি।
খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার অন্যন্য ভান্ডার হলো বৃক্ষ। ফলদ গাছ থেকে প্রাপ্ত ফুল ও ফল পুষ্টির অন্যতম উৎস। বৃক্ষ থেকে প্রাপ্ত ভিটামিন, মিনারেল ও ফাইবার গ্রামীণ ও শহরবাসীর পুষ্টিহীনতা দূর করতে অপরিসীম ভূমিকা পালন করে।
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে বনায়ন ভূমিকা অপরিমেয়। বনজ বৃক্ষ বিভিন্ন প্রাণী ও পাখির খাবার ও আবাসস্থল সরবরাহ করে, যা জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বৃক্ষের অবদান অন্যতম। বৃক্ষ বায়ুমন্ডল থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ এবং অক্সিজেন সরবরাহের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে সাহায্য করে।গাছের শিকড় মাটিকে ধরে রাখে, ফলে ভুমিক্ষয় রোধ হয়। নদীর ক্ষতিকর ভাঙ্গন প্রভাব থেকে বৃক্ষ অনুকূল পরিবেশ প্রদান করে।
সার্বিকভাবে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ফলদ ও বনজ বৃক্ষ শুধু একটিমাত্র দিক থেকেই নয় বরং সামগ্রিকভাবে টেকসই উন্নয়নের অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে কাজ করছে। তাই বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বময় ফলদ ও বনজ বৃক্ষায়ন অনস্বীকার্য।
প্রভাষক মোহাম্মদ লিয়াকত জনী