মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা সদরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে টনসিলের অস্ত্রোপচারের পর এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার বিকেলে ‘‘মির্জাপুর মডার্ণ হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার’’ এ শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। নিহত শিশু তাসরিফা আক্তার (৯) দেলদুয়ার উপজেলার পাচুটিয়া গ্রামের পারভেজ মিয়ার মেয়ে। এদিকে অস্ত্রোপচারের পর শিশুর মৃত্যুর পর হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্তৃপক্ষ গা ঢাকা দিয়েছেন।
পারভেজ মিয়া জানান, তিনি ঢাকার রপ্তানী এলাকার একটি কারখানায মেকানিক পদে চাকুরি করেন। শুক্রবার সকালে স্ত্রী পলি আক্তারকে সঙ্গে নিয়ে মেয়ে তাসরিফার টনসিলের চিকিৎসা করাতে মির্জাপুর মডার্ণ হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আসেন। ক্লিনিকের চিকিৎসকেরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাঁকে টনসিলের অস্ত্রোপচারের জন্য ভর্তি করেন। দুপুর পৌনে দুইটার দিকে তাঁকে অস্ত্রোপচার কক্ষে নেওয়া হয়। নাক কান গলার চিকিৎসক ডা. মো. মাসুম বিল্লাহ তাসরিফার অস্ত্রোপচার করেন। সোয়া দুইটার দিকে অস্ত্রোপচার শেষে তাঁকে অচেতন অবস্থায় শয্যায় নেওয়া হয়। এসময় চিকিৎসক জানান, অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। এর কিছুক্ষণ পর তাসরিফার হাত-পা ছটফট করতে করতে থাকে। পারভেজ আহমেদ নার্স-চিকিৎসকদের ডাকতে থাকেন। একজন নার্স এসে বলেন টনসিল অপারেশনের রোগী হাত পা ছটফট করে থাকে। এর কিছুক্ষণ পর তাসরিফার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে নিথর হয়ে পড়ে। পরে চিকিৎসক এসে তাকে কুমুদিনী হাসপাতালে পাঠান। কুমুদিনী হাসপাতালে চিকিৎসক জানান, শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। পরে মৃত শিশু নিয়ে ক্লিনিকে এসে ভুল চিকিৎসায় শিশুর মৃত্যুতে পারভেজ আহমদে ও পলি বেগম চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন। তখন অস্ত্রোপচার করা চিকিৎসক ডা. মো. মাসুম বিল্লাল-নার্সসহ মালিকপক্ষ সেখান থেকে সটকে পড়েন।
শিশুর বাবা পারভেজ আহমেদ বলেন, অস্ত্রোপচারের কিছুক্ষণ পর তাঁর মেয়ে ছটফট করতে থাকেন। কিছুক্ষণ পর এসে দেখেন, তাসরিফার নিথর দেহ পড়ে আছে। পরে তারা কুমুদিনী হাসপাতালে পাঠায়। কুমুদিনী হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক জানান, তাসরিফা মৃত্যু হয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ওরা আমার মেয়েকে জবাই করে মেরে ফেলেছে। আমি এর বিচার চাই। তাসরিফার মা পলি বেগম বলেন, আমার মেয়ের অন্য কোন সমস্যা ছিল না। তরতাজা মেয়েকে ওরা জবাই করে মেরে ফেলেছে বলে বিলাপ করতে থাকেন।
ভুল চিকিৎসায় রোগী মারা যাওয়ার অভিযোগের বিষয়ে চিকিৎসক ডা. মো. মাসুম বিল্লাহ মুঠোফোনে বলেন, অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। এনেস্থিসিয়া ভুলের কারণে রোগির মৃত্যু হতে পারে। তবে এনেস্থিসিয়া ডা. সাইফ আব্দুল্লাহ বলেন, এনেস্থিসিয়ায় ভুল হলে রোগির জ্ঞান ফিরবে না। কিন্ত অপারেশনের পর রোগির জ্ঞান ফিরেছে এবং কথাও বলেছে।
এদিকে টনসিল অপারেশনে শিশুর মৃত্যুর ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ টাকার বিনিময়ে সমঝোতার চেষ্টা করেছেন অভিযোগ উঠেছে। শিশু মৃত্যুর অভিযোগের বিষয়ে ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল হলিমও শিশুর বাবার সঙ্গে তাঁদের আপসরফার চেষ্টা চলছে বলে জানান।
মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম বলেন, শিশু মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর পুলিশ পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।