সাধারণ পথচলার চেয়ে সংগ্রামী পথচলা অনেক বৈচিত্রপূর্ণ। আর বৈচিত্রপূর্ণ জীবন; ভিন্ন স্বাদের-নানা আমেজের। দৈনিক প্রগতির আলো’র পথচলাও ঠিক তেমনি।বর্তমানে প্রগতির আলো’র বয়স ২৫ চলমান হলেও প্রকাশনা থেমে গিয়েছিলো যৌবনে পা ফেলার প্রাকমুহুর্তে। আমাদের ১৭ বছরের পথচলায় বহুবার ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হয়েছে। এর মাঝেও সত্যে অবিচল থাকায় টিআইবি’র ‘ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম অ্যাওয়ার্ড’সহ জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের বেশ কিছু পুরস্কারও পেয়েছে প্রগতির আলো পরিবারের সদস্যরা। এই অর্জন টাঙ্গাইলবাসীর।যৌবনের সন্ধিক্ষণে পা ফেলে প্রগতির আলো যখন উচ্ছাসের প্রস্তুতি নিচ্ছিল ঠিক সেই মুহুর্তে ষড়যন্ত্রকারীদের কোপানলের শিকার হয় প্রতিষ্ঠানটি। ওই সময় ষড়যন্ত্রকারীরা অভিযোগ তোলেন, পত্রিকার সম্পাদক আনোয়ার সাদাৎ ইমরানসহ তার পরিবারের সদস্যরা জামাত ইসলামী মনোভাবাপন্ন। তাই এই পত্রিকার প্রকাশনা অব্যাহত থাকলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে। এই অভিযোগ এনে বাতিল করা হয় পত্রিকা। বাংলাদেশের সংবিধানের কোথাও রাজনৈতিক দলে যুক্ত থাকার কারণে পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করা যাবে এমন কোন ধারা সন্নিবেশিত নেই। রাষ্ট্রযন্ত্র, রাজনীতির কুটতন্ত্র ও অপসাংবাদিকদের ষড়যন্ত্রে থমকে দাড়ায় অগ্রযাত্রা। ১৯৭৩ সালের ছাপাখানা প্রকাশনা আইনের ২০এর ১(ঙ)(র) ধারায় দৈনিক প্রগতির আলোর ডিক্লারেশন বাতিল করে তৎকালীন জেলা প্রশাসক। যে আইনের অস্তিত্ব নেই ‘বাংলাদেশ কোড’ ও বাংলাদেশে প্রচলিত গেজেটে। তারপর আইনী লড়াইয়ে কেটে যায় লম্বা সময়।
প্রগতির আলো যখন পাঠকের হাতে ছিল; তখনো মানুষ স্থানীয় পত্রিকা পড়েছেন। যখন ছিলনা তখনও পড়েছেন। এই থাকা না থাকার মাঝে পাঠকের হৃদয়ে কিঞ্চিত ভালোবাসা-ভালোলাগা জন্মেছিল প্রগতির আলো’র জন্য। সেই ভালোবাসার মানুষগুলোর তাগাদায় প্রগতির আলো পরিবার আইনী লড়াই অব্যাহত রাখে। অবশেষে সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের এক আদেশের ফলে দৈনিক প্রগতির আলো পত্রিকা প্রকাশের বাঁধা কেটে যায়। এরফলে দীর্ঘ ৭ বছর এক মাস ১৯ দিন পর পাঠকের হাতে এলো দৈনিক প্রগতির আলো।
দৈনিক প্রগতির আলো’র আত্মপ্রকাশ ঘটেছিলো ২০০১ সালের শুরুর দিকে। মধুপুর থেকে প্রগতির আলোর যাত্রা শুরু হলেও পত্রিকাটি টাঙ্গাইল জেলা শহর থেকে প্রকাশিত হয়ে কয়েক জেলা ব্যাপি বিস্তুৃত হয়েছে। ঘামে গড়া প্রগতির আলো দীর্ঘ পথচলায় কখনো কোন দল বা ব্যক্তির লেজুড়বৃত্তি করেনি। উঠানো-নামানোর এজেন্টের ভূমিকায়ও অবতীর্ণ হয়নি কোন দিন। সত্য ও সুন্দরের চেতনায় বিশ্বাসী দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ দৈনিক প্রগতির আলো কখনোই কোন ব্যক্তি বা দলের আর্থিক অনুদানে পরিচালিত হয়নি। বরাবরই দৈনিক প্রগতির আলোর অর্থের যোগান এসেছে পাঠক-বিজ্ঞাপনদাতাদের নিকট থেকে। ফলে প্রগতির আলো পরিবারে জৌলুসের ছাপ পড়েনি। তবে দৃঢ়তার কমতি ছিলনা কখনো। এখনও নেই।
আজ ১জুন রোববার দৈনিক প্রগতির আলো নতুন উদ্যমে নতুনভাবে যাত্রা শুরু করলো। এই অগ্রযাত্রায় দৈনিক প্রগতির আলোর সকল পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি রইলো শুভেচ্ছা, অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। চিড়া-গুড় খেয়ে টিকে থাকা প্রগতির আলো পত্রিকার ষোল বছরে পদার্পন সংখ্যায় পত্রিকার বিশ্লেষণ করতে গিয়ে এপার বাংলা ওপার বাংলার জনপ্রিয় কবি মাহমুদ কামাল লিখেছিলেন, ‘সততাই প্রগতির আলোর টিকে থাকার রহস্য।” সততার কঠিন চ্যালেঞ্জ বুকে ধারণ করে মর্মান্তিক মানসিক নির্যাতনে নিষ্পেষিত প্রগতির আলো পরিবার সেই কঠিনেরে সঙ্গী করে আগামীতেও থাকবে অবিচল। একই সাথে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে চলমান দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে প্রগতির আলো হবে সহযাত্রী।
বিজ্ঞান বলে, ‘মানুষ ৪০ ইউনিট ব্যথা সইবার ক্ষমতা রাখেন।’ কিন্তু একজন মাকে সন্তান প্রসবের সময় ৫৪ ইউনিট ব্যথা সহ্য করতে হয়। যার ফলে অনেক মা অকালে প্রাণ হারান। আবার অনেকে সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসেন। সেই মা সন্তান কোলে নিয়েই ভুলে যান সব ব্যথা-যন্ত্রণা। আজ আমিও অতীতকে ভুলে প্রগতির আলোকে লালন পালন করতে চাই। দেশ ও জাতির নির্ভরতার প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে চাই প্রগতির আলোকে। এজন্য প্রয়োজন আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা। যে সহযোগিতা মানবকল্যাণের উদ্যোগকে করবে আরো অনুপ্রাণিত ও গতিশীল।