টাঙ্গাইল সাপের কামড়ে আহত হয়ে মধুপুরের ১০০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন মধুপুরের পালবাড়ী গ্রামের আনছের আলী (৩৬)। তার খিচুনী শুরু হওয়ায় তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। আনছের আলীর স্বজনরা তাকে নিয়ে যান ওঝাঁর কাছে। সেখানে তার মৃত্যু হয়। ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় সোমবার সন্ধ্যা রাতে। মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাইদুর রহমান জানান, সাপে কামড়ের আহত আনছের আলী অনেকটা অচেতন ছিলেন এবং তার খিচুনি শুরু হয়েছিল। তার শরীরে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করার জন্য আইসিইউ প্রয়োজন। কিন্তু মধুপুরে ভেন্টিলেটর বা আইসিইউ নেই। তাই তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। রোগীর স্বজনরা তাকে মেডিকেলে না নিয়ে ওঝাঁর কাছে নিয়ে যান। সেখানে তার মৃত্যু হয়। টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পরিংখ্যান বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত নয় মাসে ১১৯ জন রোগিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন জেলার ১২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রেফার করা হয়েছে। তাদের পরিণতি কি আনছের আলীর মতোই হয়েছে কিনা কেউ বলতে পারেনি।
 টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলার মধ্যে পাহাড়ী চারটি উপজেলা মধুপুর, সখীপুর, ঘাটাইল ও মির্জাপুরে সাপেড় উপদ্রব একটু বেশি। অন্য ৮টি উপজেলাতেও সাপের উপদ্রব রয়েছে। সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র মতে, চলতি বছরের গত নয় মাসে মধুপুরে ২১৫ জন, সখীপুরে ২৭০ জন ও মির্জাপুরে ১৬৩ জনসহ জেলায় ১ হাজার ২৭৮ জন সাপের দংশনে আহত হয়ে সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিয়েছে। এদের মধ্যে ১ হাজার ১৫৫ জন সুস্থ্য হয়েছেন। ১১৯ জনকে রেফার্ড করা হয়েছে এবং চারজন মৃত্যু বরণ করেছে। এই হিসেবের বাইরেও বহু মানুষ সাপের দংশনে আহত হয়ে কবিরাজ ও ওঝাঁর কাছে গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। তাদের অনেকে সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেন। আবার কেউ কেউ সাপের বিষে নীল হয়ে জীবনের ইতি টানেন। 
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন চিকিৎসক জানান, সাপে কাটা রোগিদের চিকিৎসার জন্য প্রতিটি উপজেলায় প্রশিক্ষিত চিকিৎসক আছে। ভ্যাকসিন অ্যান্টিভেনমও রয়েছে। কিন্তু উপজেলা পর্যায়ের কোন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আইসিইউ নেই। তাই ঝুঁকিপূর্ণ রোগিদের রেফার করা হয়। কারণ রোগির মৃত্যু হলে অনেকেই চিকিৎসকদের সাথে দুর্ব্যবহার করে থাকেন। চিকিৎসরা অনেকটা বাধ্য হয়েই রিক্স নেয় না। 
আনছের আলীর ভাতিজা ইমরান হোসেন জানান, সোমবার সন্ধ্যায় বংশাই নদীতে মাছ ধরতে যান তার চাচা আনছের আলী। এসময় বিষধর সাপ তাকে কামড় দেয়। তিনি ওই সময় সাপের দিকে টর্চলাইট ধরলে সাপটি পুনরায় তাকে কামড় দিতে আসে। তখন আনছের আলী তার হাতে থাকা ফছকা (মাঝ ধরার দেশীয় যন্ত্র) দিয়ে ঘাও দিয়ে সাপ আটকিয়ে পরবর্তীতে পিটিয়ে সাপটিকে মেরে বাড়িতে আসে। এরই মধ্যে তার অবস্থার অবনতি ঘটলে মধুপুর হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। আমরা রোগির অবস্থা বেগতিক দেখে ওঝাঁর কাছে নিয়ে যাই। সেখানে তার মৃত্যু হয়। এভাবে আর যেন কোন লোক বিনা চিকিৎসা মৃত্যু বরণ না করেন। 
ওঝাঁ আনোয়ার হোসেন বানুরগাছী মাদরাসার হেড মোহাদ্দিছ। তিনি তুলা রাশির লোকের সহযোগিতা নিয়ে ঝার ফুক দিয়ে রোগিকে সুস্থ্য করে তোলেন। তার ভাষ্য মতে প্রতিদিন তিনি দুই তিনজন সাপেকাটা রোগির চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। তার হিসেবে গত নয়মাসে প্রায় ৮শতাধিক সাপে কাটা রোগি চিকিৎসা করেছেন তিনি।
টাঙ্গাইলের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ ও ১২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঝুঁকিপূর্ণ রোগির ময়মনসিংহ মেডিকেল বা ঢাকা মেডিকেলে রেফার করা ছাড়া কোন উপায় থাকেনা। মধুপুরের জলছত্র মিশন হাসপাতালেও সাপে কাটা রোগির চিকিৎসা বন্ধ রয়েছে এক যুগ ধরে। ফলে পুরো টাঙ্গাইলের সাপে কাটা রোগিদের জীবন ঝুকিতে রয়েছে। 
এব্যাপারে টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. ফরাজী মো. আজমল হোসেন বলেন, সবার আগে আমাদের সচেতনতা প্রয়োজন। সাপে দংশন করলে সাথে সাথেই ওঝাঁদের কাছে না ছুটাছুটি করে হাসপাতালে নিয়ে আসাই বাঞ্ছনিয়। প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা করতে পারলে রোগী অবশ্যই সুস্থ্য হয়ে উঠে। মুমূর্ষ হয়ে গেলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার করতেই হবে। তিনি আরও জানান, টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজে যন্ত্রপাতি আছে কিন্তু আইসিইউ চালু নেই। ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে জনবলের অভাবে আইসিইউ বন্ধ। আর ১২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এখন পর্যন্ত আইসিইউ স্থাপনের উদ্যোগ এখনো নেওয়া সম্ভব হয়নি।