ভূঞাপুর প্রতিনিধি:
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর লোকমান ফকির মহিলা ডিগ্রি কলেজে ৩ জন অধ্যক্ষ কর্মরত আছেন। এতে নানা বিড়ম্বনায় পড়েছেন কলেজটির শিক্ষক, অভিভাবক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা। তিন অধ্যক্ষ হলেন- অধ্যক্ষ হাসান আলী সরকার, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান আকন্দ ও চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত ফরিদুল ইসলাম। এমন অবস্থায় কলেজটির শিক্ষার পরিবেশ ও শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার পাশের হার দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে বলে জানায় অভিভাবক ও সচেতন মহলের লোকজন। এসব নানাবিধ সমস্যার দ্রুত সমাধান সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, কয়েক বছর আগে অধ্যক্ষ হাসান আলী সরকারের বিরুদ্ধে উঠা নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে বাধ্যতামূলক ৬ মাসের ছুটি ও পরবর্তীতে তার পদ থেকে তিনি সাময়িক অব্যহতি পান। তারস্থলে কলেজের উপাধ্যক্ষ মো. গোলাম রব্বানী নিকট ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। পরে অধ্যক্ষ হাসান আলী সরকার তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের স্মরণাপন্ন হলে আদালত তার পক্ষে রায় প্রদান করে। এরপ্রেক্ষিতে উপাধ্যক্ষ ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. গোলাম রব্বানী আপিল করলে আপিল খারিজ হয়। পরে অধ্যক্ষ হাসান আলী সরকার কলেজে যোগদান করার অনুমতি পায়।
এমতাবস্থায়, উপাধ্যক্ষ ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. গোলাম রব্বানী ফের হাই কোর্টের স্মরণাপন্ন হলে আবারও হাই কোর্ট অধ্যক্ষ হাসান আলীকে কলেজে স্বপদে বহালের নির্দেশ দেয়। হাইকের্টের নির্দেশ পেয়ে জাতীয় বিশ্বদ্যিালয় এক চিঠিতে উপাধ্যক্ষ ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. গোলাম রব্বানী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে অধ্যক্ষ হাসান আলী সরকারকে স্বপদে যোগদানের নির্দেশ প্রদান করে।
কলেজ কর্তৃপক্ষ হাই কোর্ট ও জাতীয় বিশ^দ্যিালয়ের আদেশ পালন না করায় বেশ কয়েকবার হাসান আলী সরকার নিজ দায়িত্বে তার কক্ষের তালা ভেঙে অফিসে বসেন। তার পরেও কলেজ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সমাধান করেনি। একপর্যায়ে অধ্যক্ষ হাসান আলী সরকার এবং উপাধ্যক্ষ ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. গোলাম রব্বানী দায়িত্ব পালন না করার নির্দেশ দিয়ে সিনিয়র শিক্ষক মিজানুর রহমান আকন্দকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ করেন।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান আকন্দ ওমরা হজ্ব পালন করতে পবিত্র কাবা শরীফে যাওয়ার আগে ফরিদুল ইসলামকে চলতি দায়িত্বে রেখে যান। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান আকন্দ ফিরে আসার পর চলতি দায়িত্ব প্রাপ্ত ফরিদুল ইসলাম দায়িত্ব ফিরিয়ে না দিয়ে জোর পূর্বক চেয়ারে বসে আছেন। অপর দিকে অধ্যক্ষ হাসান আলী সরকার উচ্চ আদালতের রায় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত চিঠির বলে তালা ভেঙে তার অফিস করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন, অধ্যক্ষ হাসান আলী তার পক্ষে উচ্চ আদালতের রায় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগদানের অনুমতি রয়েছে। তিনি যথারীতি বেতনও পাচ্ছেন। তাই তাকে তার দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হলে কলেজের শৃঙ্খলা ফিরে আসবে বলে তিনি মনে করেন।
এদিকে, সভাপতির অনুপস্থিতিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি বীর মুক্তিযোদ্ধা চাঁদ মিয়া কলেজের কর্মকান্ড দেখা শোনা করে আসছেন। তার সাথে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেনি।
চলতি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফরিদ ইসলাম বলেন, মিজানুর রহমান হজে¦ যাওয়ার আগে তাকে চলতি দায়িত্ব দেয়া হয়। পরে কমিটি স্থায়ী ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেয়। সে মোতাবেক তিনি দায়িত্ব পালন করছেন।
অপর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান বলেন, তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন। হজে যাওয়ার কারণে কমিটি ফরিদুল ইসলামকে চলতি দায়িত্ব প্রদান করে। কিন্তু হজ থেকে ফিরে এসে জানতে পারে তারস্থলে ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব পালন করছেন ফরিদুল ইসলাম। এ ব্যাপারে কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে কিছু জানায়নি।
উচ্চ আদালতের রায়ে বহাল থাকা অধ্যক্ষ হাসান আলী বলেন, তিনি কলেজের বৈধ নিয়োগ প্রাপ্ত অধ্যক্ষ। তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। তারপরও উচ্চ আদালতের রায় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত চিঠির বলে সে কলেজে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়াও তিনি সরকারিভাবে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন।
কলেজের গর্ভনিং কমিটির সভাপতি ডা. রেশমার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএন) মো. আবু আবদুল্লাহ খান বলেন, বৃহস্পতিবার এসব বিষয়ে শুনানি রয়েছে। শুনানির পর বিস্তারিত জানানো হবে।