ঢাকা | 12 September 2025

ডাকসু নির্বাচন উৎসবের পর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা

স্টাফ রিপোর্টার, .
নিউজ প্রকাশের তারিখ :Sep 10, 2025 ইং
ছবির ক্যাপশন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিরাপদে সারিবদ্ধভাবে ভোট দানের অপেক্ষায়। ছবির ক্যাপশন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিরাপদে সারিবদ্ধভাবে ভোট দানের অপেক্ষায়।
ad728

দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতির পর নির্বাচনের ট্রেনের যাত্রায় প্রথমবার অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ। এ ভোটকে প্রতিটি রাজনৈতিক দল নিজেদের এবং দেশের সামনে পথ চলার পরিস্থিতির জন্য টেস্ট ম্যাচ হিসেবে দেখছেন। ৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সারাদিন উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হলেও গণনা শুরুর আগে এসেছে নানা অভিযোগ। ফলাফলকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্র-ছাত্রী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে অবস্থান নেয় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী। এতে ভোট উপভোগ্য হলেও ফলাফল নিয়ে দেখা দেয় শঙ্কা। ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতারা দফায় দফায় সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের মতামত ও অভিযোগ তুলে ধরেন।
ডাকসু নির্বাচনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আবদুল কাদের। তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, নির্বাচন কমিশন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্ষমতার হিস্যার ভাগাভাগি করছে।
ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল-সমর্থিত ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম আবিদ বলেছেন, ‘স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই, ভোট গণনা ম্যানিপুলেট করার মধ্য দিয়ে যদি নির্বাচনী ফলাফলকে ব্যাহত করার বিন্দু পরিমাণ চেষ্টা করা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে তা প্রতিরোধ করবে।’
নির্বাচন বানচালের চেষ্টাকারীদের পরিণতি হাসিনার চেয়ে খারাপ হবে বলে মন্তব্য করেছেন ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ এর ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভোট গ্রহণ শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের বাইরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।
এ সময় একটি পক্ষ ডাকসু নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করছে অভিযোগ করে সাদিক কায়েম বলেন, যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু নির্বাচনকে বানচাল করার চেষ্টা করবে তাদের পরিণতি খুনি হাসিনা এবং ছাত্রলীগের চাইতে খারাপ পরিণতি হবে।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আবদুল কাদের অভিযোগ করেছেন, ডাকসু নির্বাচন ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছে। ইসলামী ছাত্রশিবির– সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম ভোটকেন্দ্রের ভেতরে গিয়ে ‘মেকানিজম’ (কারসাজি) করেছেন আর ছাত্রদল বাইরে থেকে ‘মেকানিজম’ করছে।
কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। তারা জানিয়েছে, নির্বাচনে এখন পর্যন্ত বড় কোনো অসঙ্গতি শিক্ষক নেটওয়ার্ক দেখতে পায়নি।
৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার রাতে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের পর্যবেক্ষক দল এ মন্তব্য করেন।
অপরদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, ‘দু-একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদ দিলে এখন পর্যন্ত যে প্রক্রিয়ায় ডাকসু নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে, তা সন্তোষজনক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রত্যাশিত সংখ্যায় অংশগ্রহণ করেছে।’ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ কথাগুলো বলেন।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক নেটওয়ার্কের পর্যবেক্ষক দলের সদস্য অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, ‘অনেক ভোটার ভোট দিয়ে বুথের কলম নিয়ে চলে গেছে। পরে বলপয়েন্ট দিয়ে ভোট দিয়েছে ভোটাররা। ব্যালট মেশিন যদি সেগুলো রিড না করতে পারে তাহলে দায় কার?’
নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তবে নির্বাচটি কেমন হয়েছে এখন পর্যন্ত তা বলার সময় হয়নি। নানান গুজব-অস্থিরতা আছে। প্রশাসনের কিছু বিষয়ে অব্যস্থাপনাও দেখা গেছে। তথ্যের গ্যাপ এবং ভুল বোঝাবুঝিও দেখা গেছে। সবাই যথেষ্ট পোলিং এজেন্ট পায়নি। অনেকেই পাস পেয়েছেন দেরিতে। কেউ কেউ আবেদন করেও পায়নি। এমন কিছু কিছু ঘাটতি ছিল।
তিনি আরও বলেন, দুটি হলের কেন্দ্রে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তারা সমভাবে দায়িত্ব পালন করেননি। কিছু কিছু যায়গায় অস্বচ্ছতা দেখা গেছে। দুটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ ধীরগতিতে হয়েছে। এছাড়া রোকেয়া হলে সহকারী প্রক্টরের সাথে ছাত্রদলের বাকবিতন্ডায় ভোটগ্রহণ কমে গেছে। অনেকেই আসেনি।
ফেসবুক পোস্টে সারজিস আলম বলেন, ‘দু-একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদ দিলে এখন পর্যন্ত যে প্রক্রিয়ায় ডাকসু নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে, তা সন্তোষজনক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রত্যাশিত সংখ্যায় অংশগ্রহণ করেছে।
‘ভোট গণনা চলছে, এরপরই ফলাফল। শিক্ষার্থীসহ সারা দেশ এই ফলাফলের দিকে তাকিয়ে আছে। একটা অভ্যুত্থানের ফসল এই ডাকসু। শুধু রাজনৈতিক কামড়াকামড়ি আর জেতা-হারার ভয়ে ডাকসুটা যেন নষ্ট না হয়। যদি এটা হয়, তাহলে যাদের কারণে এটা হবে, তারা এর দায় কখনো এড়াতে পারবেন না এবং এই দায়ের বোঝা নিয়ে সামনে চলতেও পারবেন না।’
এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘কেউ যদি ভাবেন নিজে জিততে না পারলে ডাকসু সফলভাবে শেষ হতে দেব না, তাহলে ডাকসু বানচাল করার মধ্য দিয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনাদের রাজনীতির কবর রচিত হবে।’



কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ