"আমি অস্থির জ্ঞানহারা, আমার চলার কোনো গোছ (ব্যবস্থা) রইলো না। আমি এই গাভীর আয় দিয়াই চলছি। গরু পলতাম, ঘাস কাটতাম সংসার চলতো। অহোনতো আমার সব বন্ধ হইয়া গেলো! অহোন কি করমু! মাথায় বাড়ি, আমার মরা ছাড়া গতি নাই।" উদ্বেগ বিস্ময় ও শঙ্কা নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার প্রতিমা বংকী গ্রামের কৃষক বিল্লাল হোসেন। আজ রোববার ভোরে তাঁর গোয়াল থেকে তিনটি গরু চুরি হয়ে গেছে।
দিশেহারা এই বৃদ্ধ কৃষক আরও বলেন, আমাগো দুঃখের কথা কার কাছে কমু? কইলেও কোনো লাভ হয় না। তিন বছর আগেও আমার আরও পাঁচটি গরু চুরি হয়েছিল। ওইসব আর পাই নাই।
সরেজমিনে আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে ওই কৃষকের বাড়িতে গিয়ে জানা গেছে, শনিবার সন্ধ্যায় কৃষক বিল্লাল হোসেন তাঁর একটি অস্ট্রেলিয়ান জাতের গাভী, ওই গাভীর ষাঁড় বাছুর ও একটি বড় ষাঁড় গরু গোয়ালে বেঁধে রাখেন। চোরের ভয়ে রাত দুইটা পর্যন্ত সজাগ থাকেন তিনি। পরে গোয়ালে তালা দিয়ে পাশের ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন। ফজরের আযানের সময় ঘুম থেকে জেগে উঠে তিনি দেখেন, তাঁর একটি গরুও গোয়ালে নেই।
স্থানীয় বাসিন্দা ও উদয়ন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী ও আসক্তদের ব্যাপক আনাগোনা রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব নির্মূলের ব্যবস্থা করা না হলে চুরি ও অপরাধ কমানো সম্ভব নয়। এভাবে চলতে থাকলে কৃষক বিল্লাল হোসেনের মতো আরও অনেককেই নিঃস্ব হতে হবে।
কৃষক বিল্লাল হোসেনের ছোট ভাই আব্দুল হাই বলেন, আমার অস্ট্রেলিয়ান জাতের দুটি গরু আছে। ওই গুরু দুইটি চুরি হলে আমি মরে যাবো। ওই গরু দুটি ছাড়া আমার কিছু নাই, নিঃসঙ্গ। আজ থেকে আমি নিয়ত (মনস্থির) করেছি, গরুগুলোর সঙ্গে গোয়াল ঘরেই আমি শুয়ে থাকব। কারণ একটা চোরও ধরা পরছেনা। প্রশাসন কি করে কিচ্ছু বুঝিনা!
কৃষক বিল্লালের মেজো ভাই লাল মিয়া বলেন, তিন বছর আগে বড় ভাই বিল্লালের পাঁচটি গরু চুরি হওয়ার কয়েকদিন পর আমারও পাঁচটি গরু চুরি হয়েছিল। সেই থেকে আমি গুরু পালন করা বাদ দিয়েছি। যা ধরে রাখতে পারিনা, তা পালন করে লাভ কি?
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল কালাম ভূঞা বলেন, আমরা ইতোমধ্যে পুলিশের টহল বাড়িয়েছি। প্রতিরাতে অন্তত ছয়টি দল বিভিন্ন এলাকায় টহল দিচ্ছে। চোর চক্র বৃষ্টি রাতের সুযোগ গ্রহণ করে। এই কয়েকটি মাস খামারিদের আরও সচেতন থাকতে হবে। আমরাও বিভিন্ন এলাকায় সভা-সমাবেশ করে এলাকাবাসীকে এ বিষয়ে সচেতন করছি।