কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রেলপথে একদিনও ট্রেন চলেনি! ১০বছরেও মিলেনি সিগন্যাল পয়েন্টের মালামাল। সেই রেলপথ সচল হয়নি ১০বছরেও, অচলেই থেকে যায়! এ রেললাইন ফেলে শুরু হয়েছে নতুন রেললাইন নির্মাণ ময়মনসিংহের গৌরীপুর রেলওয়ে জংশনে। ব্যয় ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কেউ কিছু জানে না!
সরজমিনে বুধবার (২৯ অক্টোবর/২৫) গৌরীপুর জংশনে গিয়ে দেখা যায়, স্টেশন এলাকায় ১০বছরপূর্বে নির্মিত ৪নং ও ৫নং রেললাইনের রেল, স্লিপার সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। সেই স্থানে মাটি সমান করে নতুন রেললাইন নির্মাণে শ্রমিক ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে প্রকল্পের শর্ত অনুযায়ী, প্রকল্পের বরাদ্দ, কাজের ধরণ, সময়সীমা ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি তথ্য সম্বলিত প্রজেক্ট প্রোফাইল সাইনবোর্ড টাঙানোর বিধান রয়েছে। নির্মাণ কাজ শুরু হলেও এ নিয়ম মানা হয়নি। স্টেশন এলাকার একাধিক দোকানদার জানায়, আগেরটাই চলে নাই। আবার নতুন করতেছে, এটাও তো ওই রকমেই হবে।
এ প্রসঙ্গে গৌরীপুর রেলওয়ে জংশনের স্টেশন মাস্টার সফিকুল ইসলাম জানান, কাজ করছে দেখছি। কে বা কারা করছে, কি কাজ হবে এসব তথ্য আমার জানা নেই? কাজ তদারিক কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারের প্রতিনিধি আবুল কালাম জানান, তিনিও বিস্তারিত কিছু জানেন না। ঠিকদারী প্রতিষ্ঠানের নামও তার জানা নেই। কাজ তদারকিতে নিয়োজিত উধ্বর্তন উপ-প্রকৌশলী কামরুজ্জামান জানান, তিনি প্রশিক্ষণে আছেন, তাই এ সম্পর্কে কিছু বলতে পারবেন না। বাংলাদেশ রেলওয়ে ময়মনসিংহের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলীর সরকারী মুঠোফোন নাম্বারে কল দিলে প্রথমে তিনি বলেন, তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেন। প্রকল্প এলাকায় প্রজেক্ট প্রোফাইল নেই, সেখানে জনস্বার্থে ও প্রচারার্থে এসব তথ্য থাকা বাধ্যতামূলক এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে, তিনি তখন বলেন আমি হাসপাতালে আছি। রেললাইন মেরামত কাজের এ তথ্য সংগ্রহে বিভিন্ন দপ্তরে গেলেও কেউ কোনো তথ্য জানাতে পারেননি। গৌরীপুর রেলওয়ের যাত্রী গাভীশিমুল গ্রামের সাদেকুর রহমান জানান, ফ্যাসিস্টের আমলেও তথ্য গোপন করে, উন্নয়ন লুটপাট হয়েছে, এখনো তাই অব্যাহত আছে। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জয়নাল আবেদিন সাগর যুগান্তরকে বলেন, গৌরীপুর জংশনকে আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেই। যখনেই স্টেশনে আসি, দেখি এদিকে-সেদিকে মেরামত করছে। কে করছে, কি করছে, কেউ জানে না! আমরা সেই ‘জানে না’ দেশে এখন বসবাস করছি।
অপরদিকে জানা যায়, ২০১৫সনে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে এ জংশনের ৪নং ও ৫নং রেললাইন মেরামত হয়। সংস্কারকৃত রেললাইন বিষয়ে রেলওয়ে প্রকৌশল বিভাগের তৎকালীন সিনিয়র সাব-এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার তোফাজ্জল হোসেন গাজী নিশ্চিত করেছিলেন এ নির্মাণ কাজ ২০১৫সনের নভেম্বরে শেষ হয়েছে। ট্রেন চলাচলের উপযোগীর ফিটনেস পরীক্ষা শেষে সংস্কারকৃত রেললাইন বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন সিগন্যাল অপারেশন বিভাগের কাজ। তবে ১০বছরেও এ বিভাগের কাজ শেষ হয়নি! ওই সময় গৌরীপুর স্টেশনের সিগন্যাল অপারেটর মো. তারিকুল আলম জানান, বছরের পর বছর লাইন অচল থাকায় সিগন্যালের সকল পয়েন্ট বিকল হয়ে গেছে। নতুন সরঞ্জামাদি না আসা পর্যন্ত লাইন সচল সম্ভব নয়। ময়মনসিংহ কেওয়াটখালীর (সিগন্যাল) সিনিয়র সাব-এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার সারোয়ার জাহান জানান, দু’টি রেললাইন সচল করার জন্য সিগন্যাল পয়েন্টে মালামালের জন্য প্রস্তাবনা ২০১৫সনের জুলাই মাসে প্রেরণ করা হয়েছে। এসব তথ্য উঠে আসে দৈনিক যুগান্তরের প্রতিবেদনে। এছাড়াও ‘গৌরীপুরে রেললাইন সংস্কারে পুরাতন স্লিপারের ব্যবহার’ শিরোনামে ‘কাঠের অধিকাংশ স্লিপার (সিলভার) ঘুনে ধরা, পচা ও নষ্ট, পুরাতন রেললাইন ব্যবহার। এসব প্রতিবেদনের পরেও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ছিলো নিশ্চুপ!
এ দিকে সেই রেললাইনে নতুন কাজ শুরু হলেও তথ্য জানে না কেউ! ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলের ন্যায় তথ্যগোপন করে উন্নয়নের নামে হরিলুটের অভিযোগ এলাকাবাসীর। এ প্রসঙ্গে গৌরীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান ফকির বলেন, আমরা ২০১৫সনে বলেছিলাম ‘যখন সিগন্যালের মালামাল আসবে হয়তো তখন এ রেললাইনের আর ফিটনেসই থাকবে না!’ আজকে সেটাই প্রমাণ হয়েছে। তখনো অভিযোগ ছিলো আমাদের রেলওয়ের বিভাগীয় দপ্তরগুলোর কাজের সমন্বয় নেই। এখনো বলছি, উন্নয়ন হতে হবে জনস্বার্থে! গৌরীপুর জংশনকে আধুনিকায়ন না করে, এসব সংস্কার আর মেরামতের নামে লুটপাট চলছে। অপরিকল্পিত এ উন্নয়ন সাধারণ মানুষের কাজে আসছে না। ফলে জনগণের টাকা সরকার বিনষ্ট করছে।