ঢাকা | 03 November 2025

মধুপুরের গারো কিশোরী ফুটবল দল ওদের চোখে মুখে স্বপ্নে বিভোর একদিন হবে দেশ সেরা

মধুপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি, .
নিউজ প্রকাশের তারিখ :Sep 30, 2025 ইং
ছবির ক্যাপশন: মধুপুর(টাঙ্গাইল); মধুপুরের পাহাড়িয়া এলাকায় গড়ে উঠা কিশোরী ফুটবল দলের খেলোয়াড়। এদের সবাই গারো সম্প্রদায়ের কিশোরী। ছবিটি বেরিবাইদ গ্রাম থেকে তোলা। ছবির ক্যাপশন: মধুপুর(টাঙ্গাইল); মধুপুরের পাহাড়িয়া এলাকায় গড়ে উঠা কিশোরী ফুটবল দলের খেলোয়াড়। এদের সবাই গারো সম্প্রদায়ের কিশোরী। ছবিটি বেরিবাইদ গ্রাম থেকে তোলা।
ad728

চারপাশে বসতিরা সব গারো সম্প্রদায়ের। আনারস কলার মৌ মৌ গন্ধে টালমাটাল। সবুজে বুকেই নিত্য চলাচল। বসতিদের বেশির ভাগই মাটির দেয়াল করা ঘরে বসবাস। কেউ দিন মজুর, কেউ ঢাকায় চাকরি, ব্যবসা, অফিসে কাজ করে। কেউ অটোবাইক চালক। কেউবা আবার বাগান বাগিচায় দিন মজুরির কাজ করে সংসার চালায়। তবে চাকরিজীবী সংখ্যা খুব একটা বেশি নয়। হাতে গোনা কিছু। এমন একটি গ্রামের নাম বেরিবাইদ। এ গ্রামটির নামে হয়েছে তাদের ইউনিয়ন পরিষদ। এটি হচ্ছে টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়ের লাল মাটির পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বসবাসরত একটি সুন্দর গ্রাম। 
নিজেরা করি ও স্থানীয় সংগঠকরা জানান, মধুপুরে গারো কোচদের বসবাস রয়েছে। কালসিন্ধুরের মেযেরা যদি দেশের ফুটবল মাঠ কাঁপাতে পারে তাহলে এ এলাকার মেয়েরাও পারবে। এমন ধারনা থেকে গারো সম্প্রদায়ের বসবাসরত এলাকায় অবস্থিত স্কুলগুলোতে যোগাযোগ শুরু। এক পর্যায়ে বেরিবাইদ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমরেন রিছিল আগ্রহের সাথে টিম গঠনের কাজে এগিয়ে আসে। ৩০ জনের একটি টিম গঠন করে গত ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, নিজেরা করির কর্মকর্তা কর্মচারী, সংগঠক সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার লোকদের নিয়ে এর যাত্রা শুরু। উপকরণ, কোচ,বুটসহ অন্যান্য সহযোগিতা দেয় নিজেরা করি আর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাঠ সংস্কার গোলকিপারসহ অন্যান্য সহযোগিতা করে দেয়।
বেরিবাইদ গিয়ে দেখা যায়, খেলোয়াড়দের চোখে মুখে স্বপ্নদানা বেঁধেছে জাতীয় পর্যায়ে মাঠ কাঁপানো। পড়াশোনার পাশাপাশি ওরা সপ্তাহে তিন মাঠে নামে।জার্সি বুট পড়ে দৌড়ে যান সাদা কালো ফুটবলের সাথে। এ যেন কোন দৌড়ের পাল্লা। তা না হলেও ওরা এভাবেই নিজেকে গড়ে তোলেছে। কিশোরীরা ব্যবস্থাপনা সহযোগিতা পেলে খুশি এমনটাই জানালেন কিশোরী দলের খেলোয়াড়েরা। 
গোপালপুর সূতি বিএম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ও সংগঠন আব্দুল লতিফ জানান, মধুপুর অঞ্চলে গারো সম্প্রদায়ের কিশোরীদের একটি দল গঠন মানসে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সহযোগিতা ও পরামর্শে বেরিবাইদ জুনিয়র হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে একটি দল গঠন করা হয়। তিনি বলেন, তার গোপালপুর সূতি বিএম এর মেয়ে কয়েকবার দেশ সেরা হয়েছে। মধুপুরের মেয়েরাও দেশ সেরা হবে এমনটাই প্রত্যাশার কথা জানান তিনি। 
বেরিবাইদ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমরেন চিসিম বলেন, তার স্কুলের ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেনীর অধ্যয়নরত ৩০ মেয়ে নিয়ে এ টিম গঠন করা হয়েছে। নিজেরা করির সার্বিক তত্ত্বাবধানে একজন কোচ সপ্তাহে তিন দিন প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। বয়সে ছোট হলেও মেয়েরা ভালো খেলছে।এর মধ্যে ৫জন মেয়ে টাঙ্গাইল জেলার হয়ে ঢাকা ময়মনসিংহে খেলে আসছে। তার আশা একদিন তারা দেশের জাতীয় পর্যায়ে ফুটবল সুনাম বয়ে আনবে।  এ সময় তিনি মাঠের কাছে দুটি সড়ক কাঁচা সড়ক পাকাকরণ ও বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের দাবি জানিয়ে এমন আয়োজন করার জন্য  ইউএনও ও নিজেরা করির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
নিজেরা করি'র মধুপুরের সমন্বয়ক মজিবর রহমান বলেন, গত বছর থেকে শুরু এ দলের কার্যক্রম। তবে এপ্রিল মাস থেকে নিজেরা করি সংস্থার তত্বাবধানে একজন প্রশিক্ষক মাসে ১২ দিন প্র্যাক্টিস করায়। তাদেরকে বুট জার্সি মোজা বলসহ আনুষঙ্গিক উপকরণ দিয়ে সহায়তা করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এ দল উপজেলা পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায়ে গৌরব বয়ে আনবে একদিন। নিজেরা করির এ সহায়তা ৫ বছরের বেশি সময় চলবে বলেও তিনি জানান।
মধুপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুবায়ের হোসেন বলেন, বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করতে নারী ফুটবল দল ব্যাপক ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে। সকলের উচিত নারী ফুটবলারদের পাশে দাঁড়ানো।
 এ কিশোরী ফুটবল দল তাদের নির্ধারিত সময় পর্যন্ত প্র্যাকটিস করতে পারলে তাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে যেতে পারবে, জাতীয় পর্যায়ে কালসিন্ধুেরর কিশোরীদের মত  ও কৃষ্ণার মতো এরাও একদিন ফুটবলের মাঠ কাঁপাবে দাপিয়ে বেড়াবে দেশ ও দেশের বাইরে। মধুপুরের সুমান খ্যাতি ছড়াবে বিশ্বময়।  তবে দরকার সঠিক পর্যবেক্ষণ, তত্ত্বাবধান ও পৃষ্ঠপোষকতা। এমনটাই ভাবছে সংশ্লিষ্টরা। 

 


কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ