ঢাকা | 05 November 2025

ঘুষ ছাড়া দলিল হয়না মধুপুর সাবরেজিস্ট্রার অফিসে

মধুপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি, .
নিউজ প্রকাশের তারিখ :Oct 2, 2025 ইং
ছবির ক্যাপশন: ছবির ক্যাপশন:
ad728

টাঙ্গাইলের মধুপুরে সাবরেজিস্টার অফিসে ঘুষ ছাড়া কোন দলিল নিবন্ধন হয়না। মনপুত ঘুষ দিতে অস্বীকার করলে জমির দলিল নিবন্ধন ছাড়াই ফিরে আসতে হয় ক্রেতা-বিক্রেতাদের। এমন ঘটনার প্রতিকার চেয়ে মঙ্গলবার জেলা রেজিস্ট্রার ও দুদক বরাবরে আবেদন করেছেন ভুক্তভোগি আয়েজ উদ্দিন আজাদ।

জানা যায়, মধুপুর উপজেলা থেকে সরকারের রাজস্ব আয়ের সবচেয়ে বড় মাধ্যম সাব-রেজিস্ট্রার অফিস। রাজস্ব আদায়ে সহযোগিতা করেন দেড়শতাধিক দলিল লেখক ও ভেন্ডার। দলিলের কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে রাজস্ব আদায় নিশ্চিত করে দলিল সম্পাদন করেন সাব-রেজিস্ট্রার। মধুপুরের সাব-রেজিস্ট্রার অঞ্জনা রাণী দেবনাথ যোগদানের পর থেকেই সরকারি রাজস্ব আদায়ের চেয়ে ব্যক্তিগত রাজস্ব (ঘুষ) আদায়ে সিদ্ধ হস্ত হয়। তার অধস্তন কর্মচারী, নকলনবীস, দলিল লেখক, ভেন্ডাররা তার বেধে দেওয়া নিয়মেই দলিল নিবন্ধনের কার্যক্রম চালাতে বাধ্য হচ্ছেন। 

বিধি অনুসারে একটি জমির দলিল সম্পাদনের ক্ষেত্রে জমি বিক্রেতার স্বত্ব নিশ্চিত করার জন্য পর্চা, খাজনা-খারিজ, এনআইডি ও ছবি অত্যাবশ্যকীয়। এই সকল কাগজপত্র সঠিক থাকলে সরকারি রেজিস্ট্রেশন ফি ১হাজার একশ টাকা ও ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষেত্রে দলিল মূল্যের সাড়ে ৭ ভাগ ও পৌর এলাকায় সাড়ে ৯ভাগ হারে কর জমা দিতে হয়। তারপরই একটি দলিল সুষ্ঠুভাবে সম্পাদিত হওয়ার কথা। মধুপুরে এই বিধি অনুসরণে নানা চোরাগলি রয়েছে। ওই গলিতে পরলেই ধাপে ধাপে টাকা (ঘুষ) দিতে হয়।

জমির ক্রেতা-বিক্রেতা, দলিল লেখক ও ভেন্ডারদের নিকট থেকে জানা যায়, দলিলসহ অন্যান্য কাগজপত্রের ফটোকপি হলে নির্ধারিত ফিসের বাইরে ন্যুনতম ৩ হাজার টাকা দিতে হয়। একই দাতার একাধিক দলিল হলে, হেবা দলিল, হেবার ঘাষণাপত্র, দানপত্র এবং জমি বিক্রেতার বাবা-মার নামে পর্চা হলে ২-৫ হাজার টাকা দিতে হয়। জমি বিক্রেতার দাদা, দাদি, নানা, নানির নামে পর্চা থাকলে, নামের সাথে যুক্ত অন্য নাম বা ডাক নাম থাকলে ৫-১০ হাজার টাকা গুনতে হয়। বন্টন নামা দলিল ও রেজিস্ট্রি বায়না এবং আয়কর বা টিন সার্টিফিকেট না থাকলে নির্ধারিত ৫ হাজার টাকা দিতে হয়। সাবরেজিস্ট্রার অঞ্জনা রাণী দেবনাথের এই নিয়ম তিনি যোগদানের পরই চালু করেছেন। তবে তিনি নিজ হাতে কোন টাকা নেননা। এই টাকা তার হাতে পৌঁছে দলিল লেখক বা নকলনবীসদের মাধ্যমে। ঘুষের টাকা না দিলে দলিল নিবন্ধন হয়না এমন অভিযোগও রয়েছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের।

২৮ সেপ্টেম্বর ৫৫ হাজার টাকা ঘুষ না দেওয়ায় আয়েজ উদ্দিন ও তার অপর ৬অংশীদার জমি দলিল করতে পারেননি। ৮১ বছর বয়স্ক জমি বিক্রেতা আব্দুল মজিদকে নিয়ে সাবরেজিস্ট্রার অফিসে টানা চারঘন্টা অপেক্ষা করে দলিল নিবন্ধন করতে ব্যার্থ হয়ে ফিরে এসেছেন। পরে তিনি ৩০ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল জেলা রেজিস্ট্রার ও দুদকে অভিযোগ জমা দিয়েছেন।

আয়েজ উদ্দিন আজাদ বলেন, আমিসহ সাতজন অংশীদার মিলে মালাউড়ী গ্রামের আব্দুল মজিদের নিকট থেকে ছয় শতাংশ জমি ক্রয়ের জন্য ৩১ লাখ ৮০ হাজার টাকা নির্ধারণ করে নগদ এক লাখ টাকা বায়না করি। আমরা জমি ক্রেতা সাতজন এবং বিক্রেতাসহ তার সন্তানেরা মিলে ২৮ সেপ্টেম্বর রোববার জমির দলিল নিবন্ধন করতে যাই। আমাদের জমি হলো মধুপুর পৌরশহরের মালাউড়ী মৌজার ২২ নম্বর  এস.এ খতিয়ান এবং বি.আর.এস ৭০৬ খতিয়ানের ১১৫ নম্বর এসএ দাগের এবং বি.আর.এস ৭৪৩ নম্বর দাগের ছয় শতাংশ জমি।
ভেন্ডার আব্দুস সামাদের সহযোগিতায় প্রয়োজনীয় সরকারি ফি ব্যাংকে জমা দিয়ে সাবরেজিস্ট্রারের কাছে দলিল নিবন্ধনের জন্য কাগজপত্র উপস্থাপন করি। জমি বিক্রেতা বার্ধক্যজনিত কারণে দোতলায় উঠতে পারেননি। তাই সাবরেজিস্ট্রার অঞ্জনা রাণী দেবনাথ নিচে হুইল চেয়ারে বসা আব্দুল মজিদের সম্মতির নেওয়ার জন্য নকলনবীস জসিম উদ্দিনকে পাঠান। জসিম উদ্দিন দলিল দাতা আব্দুল মজিদের সাথে কথা বলেন। কিছুক্ষণ পরে ভেন্ডার মিরাজ আলী ও আব্দুস সামাদের মাধ্যমে আমাদের জানানো হয় ৫০ হাজার টাকা দিলে দলিল হবে অন্যাথায় নয়। পরে আবার জানানো হয় জমি ক্রেতাদের মধ্যে একজনের আয়কর সনদ নেই তাই আরও পাঁচ হাজার টাকা দিতে হবে। ৫৫ হাজার টাকা দিলে দলিল হবে অন্যথায় হবেনা জানানোর পরবর্তী চার ঘন্টা চেষ্টা ও অপেক্ষার পর আমরা জমির দলিল করতে ব্যার্থ হয়ে ফিরে আসি।

ভেন্ডার মিরাজ আলী বলেন, জমি দাতা আব্দুল মজিদ বৃদ্ধ মানুষ। ভালোভাবে কথা বলতে পারেনা। জমি বিক্রিতে তার সম্মতি আছেকিনা বিষয়টি অস্পষ্ট। তাই সাবরেজিস্ট্রার ৫০ হাজার টাকা চাইছে বিষয়টি সামাদ ভেন্ডার জমি ক্রেতা আয়েজ উদ্দিন আজাদকে জানিয়েছিল। টাকা না দেওয়ায় তার দলিল নিবন্ধন হয়নি। পরবর্তীতে ব্যাংকে জমাকৃত ফিসের টাকাও তাদের ফেরৎ দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে মধুপুর সাবরেজিস্ট্রার অঞ্জনা রাণী দেবনাথ বলেন, আমি দলিল গ্রহণে কোন প্রকার টাকা নেইনা। যদি কেউ নিয়ে থাকেন তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো। আয়েজ উদ্দিন আজাদের অভিযোগের ব্যাপারে বলেন, জমিদাতা খুবই বৃদ্ধ। আদালতের সম্মতি সাপেক্ষে তার দলিল সম্পাদন করা সম্ভব হবে।

এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল জেলা রেজিস্ট্রার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ৫০ হাজার টাকা ঘুষ না দেওয়ায় দলিল করতে পারেনি এমন অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি করা হবে। 



কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ